মাদার্স ডে
-স্বাতী পারেখ
গতকাল যে day গেল, তা হল Happy Mother’s day. দিনটিতে সব মায়েরা happy হন না কি হতে হয়? সন্তানেরা মায়েদের প্রাণ। সন্তানের happy তেই মায়েরা happy. মায়েরা নিজেদের happy নিয়ে ভাবেন না। যে সন্তানেরা মাকে বোঝে, মায়ের ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্ক্ষাকে উপলব্ধি করতে পারে, তাতেই তো মায়েদের সুখ ষোলো আনা পাওয়া হয়ে যায়। তার ওপর যে সন্তানেরা মায়ের দেখভাল করে, নিয়মিত খোঁজ খবর করে, শারীরিক-আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দেয় সেই সব মায়েদের সুখ উপছে পড়ে। ধন্য তাদের মাতৃত্ব। কিন্তু তার বাইরের মায়েরা কি সুখী নন? ‘সুখ কারে কয়’? ফেসবুক দেখে মনে হল সব মায়েরা কী সুখী! জীবিত মৃত সব মায়েদের প্রতি সন্তানদের অপার ভালোবাসা। দেখে কী যে ভালো লাগে! সন্তানেরা বোঝে যে মা তো মা ই। মায়ের সঙ্গে অন্য কোন কিছুর তুলনা চলে না। মায়ের সঙ্গে স্বার্থের কোন লেনদেন নেই। হতে পারে না। সে বরের মা ই হোক বা কনের মা ই হোক। তবু সংসার বড় জটিল। নানা কারণে মা আর সন্তানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। নানা পরিস্থিতিতে সন্তান মাকে বোঝে না বা মা সন্তানকে বোঝে না।
পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝি হয়। মান, অভিমানে, রাগে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কখনও মায়ের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা বড় হয়, সমাজের ভ্রুকুটি বড় হয়, কখনও বা সন্তানের বয়স, নানাবিধ অভিজ্ঞতা, নিজস্ব স্বাধীন মানসিকতা, অত্যধিক আত্মসচেনতা একরকম দূরত্ব তৈরি করে।
ছোটবেলায় মায়ের কাছে যে নির্ভরতা, আশ্রয় পায়, তা বড় হয়ে আর পায় না। ফলে কাছে থাকলেও দূর থেকে দূরে চলে যায়। পাশের ঘরে থাকলেও জোরে মা বলে আর ডাকতে পারে না। মাও অভিমানে আরও দূরে সরে যায়। বর্তমান সমাজের ব্যস্ততা যদিও বড় একটা কারণ কিন্তু যোগাযোগের নানারকমের সুন্দর সুন্দর মাধ্যম ও তো আছে। আগের দিনে কুশলবার্তা পাওয়ার জন্য চিঠির প্রতীক্ষা করতে হত। এখন তো ইচ্ছে করলে মা ও সন্তানেরা অষ্টপ্রহর দর্শন ও শ্রবণের আনন্দ দুইই পেতে পারে। যত আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম উন্নত হচ্ছে তত বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবশ্য আজকের মা বাবারা বয়ঃপ্রাপ্ত সন্তানদের কাছে বিশেষ সমাদর, যত্ন পাওয়ার তোয়াক্কা করে না। আগে কন্যারা জীবনের প্রথমে পিতার আশ্রয়ে, পরে পতি, তারও পরে পুত্র এই তিন “প”এর অধীনে ছিল। এখন দিনকাল পাল্টে গেছে। মায়েরা আধুনিকা, স্বাবলম্বী। ছেলেমেয়ে দেখলে ভালো, না দেখলেও ক্ষতি বিশেষ নেই। নিজের মতো, স্বাধীন ভাবে বাকি জীবন উপভোগ করবে।
তবু মাতৃদিবস এক বিশেষ দিন। আমাদের ছোটবেলায় এসব ছিল না। মাতৃদিবস আবার আলাদা বিশেষ দিন কি? জন্ম থেকেই তো জানি মা ঘরে আছে। খিদে পেলে খেতে দেবে, জ্বর হলে রাত জেগে কপালে জলপটি দেবে, দুষ্টুমি করলে দু ঘা দেবে। এই তো মা, মা তো আমাদের অভ্যেস। এর আবার বিশেষত্ব কি? আছে হয়তো। যাতে সমাজের, কর্মজগতের, ব্যক্তিত্বের কঠোর নিষ্পেষণে গর্ভধারিণী জননী অস্তিত্বহীন না হয়ে পড়েন।
সৃষ্টির আদিকাল থেকে, সৃষ্টির অন্তকাল পর্যন্ত মা থাকবেন, মায়ের মহিমা থাকবে। কথাই আছে কুপুত্র যদিবা হয় ,কুমাতা কদাপি নয়, তা মাতৃদিবস পালন করি বা না করি। তবু বর্তমান জগতে এই মাতৃদিবস মায়েদের কাছে বড় আনন্দের, বড় সৌভাগ্যের। জয় হোক মাতৃদিবসের, জয় হোক মা ও সন্তানের বন্ধন।
* কর্মী, ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বি এস এন এল) এবং কনভারজেন্স-এর জার্মান লেভেল-১ কোর্সের শিক্ষিকা।