কনভারজেন্স লাইব্রেরীর কথা

সুজিত মাইতি *

ম্যামের অকস্মাৎ জীবনাবসানের পর কনভারজেন্স-এর দায়িত্ব ম্যামের একমাত্র সুযোগ্যা কন্যা সৌম্যনেত্রা মুন্সী সাদরে গ্রহণ করেন। তাই কনভারজেন্স একদিনও মাতৃহারা হয়নি। ম্যাম্ নিজেও আমাদের অনেক সময় বলেছেন যে কনভারজেন্সের উত্তরসূরী হিসাবে ম্যামের পর গুড়িয়া দিদিই (সৌম্যনেত্রাদিকে ম্যাম্ এই নামে ডাকতেন) দায়িত্ব নেবে। দিদি ম্যামের পারলৌকিক কর্ম শেষ করেই কনভারজেন্স-কে সময় দিয়েছেন। জেনেছেন ম্যামের শুরু করা অথচ অসমাপ্ত কাজগুলোর অবস্থান সম্বন্ধে। আমাকে ম্যাম্ যেগুলো বলে গিয়েছিলেন আমি দিদিকে সব জানিয়েছিলাম। দিদি সর্বপ্রথম সেই কাজগুলো শেষ করার পরিকল্পনা নেয়। সর্বোপরি ম্যামের ইচ্ছা ছিল কনভারজেন্স লাইব্রেরীটা সর্বসাধারণের জন্য প্রস্তুত করে দেওয়া। বিভিন্ন কারণে সেটা বিলম্ব হতে থাকছিল। কিন্তু দিদি সর্বপ্রথম দায়িত্ব নিয়েই তিনমাসের মধ্যে খাতায় ক্যাটালগ্ করে কনভারজেন্স লাইব্রেরীকে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দিয়েছিলেন। প্রথমে ভেবেছিলাম এতো কম সময়ে কিভাবে এটা সম্ভব কিন্তু দিদির পরিকল্পনা সেটাকে বাস্তবায়িত করেছিল। দেখেছি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাই কাজকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং সমাপ্ত করতে সক্ষম। কনভারজেন্স লাইব্রেরী খোলার পর থেকেই এটি সংস্কৃত জগতের অনেক দুষ্প্রাপ্য বইয়ের একমাত্র ভাণ্ডার হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোলার প্রথম থেকেই অল্প হলেও প্রায় প্রতিটি দিনই দূর-দূরান্ত থেকে বিশেষতঃ শোধছাত্র-ছাত্রীরা কনভারজেন্স গ্রন্হালয়ে এসেছে এবং তাঁদের শোধবিষয়ের সন্ধান পেয়েছে। এমনকি গ্রীষ্মের দাবদাহ যাতে পড়ায় কোন বিঘ্ন না ঘটায় সেই জন্য বারবার বলেন এ.সি-টা যেন চালিয়ে নিই। ওনার এইরকম অনেক মহত্ত্ব ম্যামের মাতৃসম ব্যবহারকে স্মরণ করায়। লাইব্রেরীর দায়িত্বে থাকা আমি এবং যারা নিয়মিত এই লাইব্রেরীতে আসেন তারা দিদিকে জানেন তিনি কতটা আমাদের কাছের। কনভারজেন্স লাইব্রেরী শুরুর একমাসের মধ্যেই ক্যাটলগ্-টি টাইপ্ করে সহজেই বই সার্চ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই আগত ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই সার্চ করে গ্রন্হের বিবরণ জানতে পারবে এই ব্যবস্থা হচ্ছে। আগামী দিনে আধুনিক সংস্কৃত সাহিত্যের একটি বড় রত্নভাণ্ডার হতে চলেছে এই কনভারজেন্স লাইব্রেরী। যেখান থেকে বিশেষতঃ শোধছাত্র-ছাত্রীদের তাঁদের শোধবিষয় আহরণ করতে পারবে। ম্যামের লেখা বা সম্পাদিত গ্রন্হের সংখ্যা ২৮ টি। যেগুলির বেশ কয়েকটাই বর্তমানে পুনর্মুদ্রণের অভাবে দুষ্প্রাপ্য। সেগুলির সবকটিই এই লাইব্রেরীতে যত্ন সহকারে রাখা আছে। অনেক দুষ্প্রাপ্য বই এই গ্রন্হালয়ে থাকায় এটি মূলতঃ রেফারেন্স লাইব্রেরী হিসেব ব্যবহারযোগ্য। অর্থাৎ এখান থেকে কোন বই ইস্যু হয় না। আগত ছাত্র-ছাত্রীরা এসে পড়াশোন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা আছে। এমনকি বিভিন্ন রিসার্চ জার্নালের সম্ভারও বটে এই কনভারজেন্স লাইব্রেরী। ম্যামেরও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা ও কাজ এখানে সুন্দরভাবে রাখা আছে। যেগুলিও একসাথে এককাছে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এই সমস্ত মহান্ কর্মের পিছনে আছে ম্যামের স্বপ্ন আর দিদির সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

* অ্যাকাডেমিক অ্যাসিস্টেন্ট, কনভারজেন্স।