মাত্রাজ্ঞান (Sense of Proportion)

– অঞ্জলিকা মুখোপাধ্যায় **

জীবনে মাত্রাবোধ থাকা অত্যাবশ্যক। এর অভাবে মানুষের জীবনে নানাপ্রকার দুঃখ, বিপদ ও সমস্যা দেখা দিতে পারে। অথচ আমরা বিষয়টিকে কোন গুরুত্বই দিতে চাই না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন, আহার-বিহার, নিদ্রা-জাগরণ, কর্ম-আলস্য, চলন-বলন এমন কি সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও মাত্রাজ্ঞান অপরিহার্য।

          মাত্রা হল একটি সীমারেখা, গণ্ডী, পরিমাপ। এটি যেন একটি লক্ষণরেখা, যার মধ্যে থাকলে মানুষ সুস্থ, নিরাপদ ও অনিন্দিত থাকে। রেখাটি লঙ্ঘন করলে আসে বিপদ, তিরস্কার, নিন্দা বা উপহাস। সামাজিক ক্ষেত্রে ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে মাত্রা রক্ষা করতে জানলে নানা সমস্যা ও লাঞ্ছনা থেকে বাঁচা যায়।

          আহারে মাত্রাহীনতা চরম বিপদ ডেকে আনে। প্রত্যেক মানুষের পাচনশক্তি পৃথক। তা উপেক্ষা করে লোভবশতঃ ভোজনের অভ্যাস অত্যন্ত বিপজ্জনক। ‘বিহার’ শব্দের অর্থ বিনোদন ধরা যেতে পারে। মাত্রাছাড়া আমোদপ্রমোদ ও বিলাস-ব্যসন শারীরিক অসুস্থতা ও ধনক্ষয় উভয়ের কারণ হয়। অতিরিক্ত নিদ্রা এবং বিশ্রামের অভাব – দুটিই শারীরিক  সমস্যা ডেকে আনে। কর্ম ব্যতীত মানুষ বাঁচতে পারে না, কিন্তু অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় কর্মে ব্যস্ত থাকা উচিত নয়। আবার কর্ম বিনাই জীবন চালানোর মনোভাবও ত্যাগ করা উচিত। জীবনযাত্রার পদ্ধতি, চলাফেরা এমন কি কথাবার্ত্তা বলার সময়ও একটা নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলতে হয়। সেই নিয়ন্ত্রণরেখা সম্পর্কে শৈশব থেকেই সচেতন থাকতে হবে । যদি কোন কু-অভ্যাস হয়ে যায়, তা দৃঢ়তার সঙ্গে বর্জন করতে হবে। ব্যক্তিগত পরিসরে সদাচরণ ও কদাচরণ শেষপর্যন্ত সমাজের উপর প্রভাব ফেলে। নিজের ব্যবহার মানুষকে নিন্দা বা প্রশংসা এনে দেয়। মাত্রাজ্ঞান মানুষকে সুস্থতা, নিরাপত্তা ও প্রশংসার পথে চালিত করে।


* এটি কনভারজেন্স-এর আয়োজনে ‘ভারতীয় ঐতিহ্য: সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান’ বিষয়ক বক্তৃতামালার তৃতীয় বক্তৃতার সারসংক্ষেপ।

** পিএইচ্.ডি গাইড, সিকম স্কিল ইউনিভার্সিটি, বোলপুর।